সমস্ত লেখাগুলি

বিবর্তনের সংসার -
চন্দন পাত্র
May 20, 2025 | বিবর্তনবাদ | views:3 | likes:0 | share: 0 | comments:0

সৃষ্টিকর্তা বিবর্তনবাবুর সাথে, তাঁর কর্ম-সহায়ক বিজ্ঞানবাবুর ঘনিষ্ঠতা ল্যাংটা বয়স থেকেই। দুই বন্ধুর নেশা পেশা নতুন কিছু সৃষ্টি করার। সেই উদ্দেশ্যে তৈরি করেছেন ‘রূপান্তর’ কর্মশালা। 

                সৃষ্টির একমাত্র ঠিকানা ‘রূপান্তর’ কর্মশালায় অভিযোজন, অভিব্যক্তি এবং সংগ্রামবাবুর তত্ত্বাবধানে সৃষ্টির কাজ চলতে থাকলো। বিবর্তনের পথে বিজ্ঞানের পাথেয় খরচ করে রূপান্তর। বারংবার বস্তু এবং পরিস্থিতির চরিত্রের রূপ, স্বভাব এবং সংলাপ বদলিয়ে নতুন নতুন জগতের নাটক মঞ্চস্থ করে চলেছে প্রতিনিয়ত। 


                বিবর্তনবাবুরা মহাকাশ, সৌরজগত প্রভৃতি সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত থাকলেন না। আরও নতুন নতুন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠলেন। প্রায় পাঁচ’শ কোটি বছর  আগে, দু’জনের সৃষ্টির নেশায় শুন্য থেকে শুরু করলেন একটা একটা করে সংখ্যার পরিস্থিতি। কিন্তু কোন কিছুতেই আত্মতৃপ্তি হচ্ছিল না। একেবারে অন্যরকমের বিশেষ কিছু সৃষ্টির ভাবনায় তন্ময় হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। অবশেষে উপলব্ধি করলেন, একটা বৃহত্তর ক্ষেত্র’র প্রয়োজনীয়তা। 


                ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য, তিনি অত্যন্ত গোপনে অসম্পূর্ণ সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রদের মধ্যে মান-অভিমানের তুমুল ঝগড়া বাঁধিয়ে দিলেন। শুরু হলো ক্ষমতা জাহিরের আগ্রাসন অভিযান। আত্মঅহংকারের দাপটে একজন আরেকজনের উপর আছড়ে পড়লো। চারদিকে ছড়ানো ছিটানো খণ্ড বিখণ্ড দেহ, আগুনের হল্কা, বিষাক্ত গ্যাস, উল্কা বিস্ফোরণ। তপ্ত লাভার বন্যায় ভাসছে থাকলো মহাকাশের মহা অবকাশ। চলতে থাকলো ধনী গ্রহদের শাসনে, শোষণ পর্ব। গরীব গ্রহ’দের উপর ধর্ষণ, অত্যাচার। মহাকাশের মহাশ্মশানে ঘটতে থাকলো ভয়ঙ্কর ধ্বংসাবশেষের চিত্রনাট্য।

                ‘রূপান্তর’ উত্তপ্ত লাভায় মোড়া পৃথিবী নামের গ্রহ’টাকেই নবসৃষ্টির ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত করে। উত্তপ্ত লাভাকে ঠাণ্ডা করতে প্রয়োজন হলো, দীর্ঘ সময় আর প্রেমের স্নেহশীল কোমল পরশ।

                বিবর্তনবাবু, ‘থিয়া’ নামের সুন্দরী মমতাময়ী গ্রহটির প্রেম সুধায় পৃথিবীর তপ্ত হৃদয়ে শীতল আস্তরণ  চাপাতে চাইলেন। মহাকাশের প্রভাবশালী গ্রহদেরকে দিয়ে, উস্কানিমূলক প্ররোচনায় থিয়া’র শ্লীলতাহানি ঘটানোর পদক্ষেপ নিলেন। ইজ্জত বাঁচাতে থিয়া উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠলে তৎক্ষণাৎ স্তস্ত্র থিয়াকে তিনিই বাঁচালেন, পৃথিবীর দেহে তাকে বিলীন করে। ‘থিয়া’র আলিঙ্গনে পৃথিবীর শ্বাসপ্রশ্বাস খানিকটা স্বাভাবিক হলো, কিন্তু দুশ্চিন্তা বাড়ালো কুলীন গ্রহদের দুশমনিতে। পৃথিবীর সঙ্গে থিয়া’র ঘনিষ্ঠতার সাক্ষী এবং পৃথিবীর নিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে, সুদৃশ্য একটা খণ্ড’কে মেজে ঘষে তিনি পরমাসুন্দরী চাঁদ বানালেন। চাঁদ পৃথিবীর দেহে এঁকে দিল, শিল্প সাহিত্যের আদিম চুম্বন। কিশোরী পৃথিবীকে সাজাতে প্রয়োজন হলো জল, মাটি, কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন,আমিষ দ্রব্য, ধাতব এবং খনিজ  ইত্যাদি উপাদানগুলোর মোলায়েম রূপ-টান।

                 কিশোরী পৃথিবীর সাজুগুজু সামগ্রী সংগ্রহে, আবার কূটনৈতিক কৌশলে মহাকাশের  প্রভাবশালী নেতা-গ্রহগুলোকে চটিয়ে বিবর্তনবাবু, দীর্ঘকাল ধরে উল্কা বৃষ্টি করালেন পৃথিবীর সারা শরীরে। রণ সাজে সজ্জিত উল্কা বাহিনী পর্যায়ক্রমে পৃথিবী আক্রমণ  করলো বীরবিক্রমে। পৃথিবীকে ধ্বংস করতে এসে উল্কা বাহিনী নিজেদেরই মৃতদেহ দিয়ে বারবার লিখে গেল  পৃথিবীর জীবনচরিত। তাতেই রূপান্তরের উদ্দশ্য সফল হলো। উল্কাদের শরীরের প্রসাধনী সামগ্রীতে লেগে থাকা বরফের অণু, আমিষের দানা, নাইট্রোজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বিপুল যোগান, যাযাবরের নূপুর পায়ে পৃথিবীর অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়লে পৃথিবী সমৃদ্ধ হলো। 

             বরফের অণুগুলো গালিয়ে মহাসাগর বানানো হলো। তার তলদেশে আমিষ দ্রব্যের দানা খনিজপদার্থ, নাইট্রোজেন, কার্বন এবং অম্ল পদার্থগুলোকে ধাতব শৃঙ্খলে বেঁধে পাথরের খাঁজে ভরে খুব চাপ আর তাপের আওতায় পরাধীন করে রাখলেন রূপকার বিবর্তনবাবু। কোটি কোটি বছর ধরে তাদেরকে দিয়ে পরষ্পরের সাথে নিয়মিতভাবে আড়ি-ভাবের খেলায় মাতিয়ে রাখলেন। কার্যকে খাঁচা বন্দী করতে কারণের জাল বিছিয়ে দিলেন  দক্ষ শিকারী। স্বাধীনচেতা বিজ্ঞানবাবুই, বিবর্তনবাবুর এই খেয়ালীপনার নাম রেখেছেন বিবর্তনবাদ।

            

                সুদীর্ঘকাল পরে, বিজ্ঞানবাবুর রাসায়নিক হস্তক্ষেপে, সংগ্রামবাবুর অনুপ্রেরণায় পরাধীন দানাগুলো সম্মিলিতভাবে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং অত্যন্ত ধীর গতিতে জটলা পাকাতে থাকে। হৃদয়ে তাদের অমরত্ব লাভের প্রচ্ছন্ন স্বপ্ন। কয়েক হাজার কোটি বছর ধরে স্বপ্ন জয়ের আশায় স্থবীর। বিবর্তনবাবু বুঝতে পারলেন ওদের প্রচ্ছন্ন স্বপ্নেই, তাঁর আকাঙ্ক্ষিত বাস্তব ঘুমিয়ে রয়েছে। তাকে জাগিয়ে তুলতে চাই  বহিঃশক্তির আক্রমণের করাঘাত।


                  বিবর্তনবাবু স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে আবার মহাকাশে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিলেন। বৃহৎ শক্তির চাপে, ক্ষুদ্র কণাগুলো উত্তপ্ত হয়ে উঠল। তাঁর স্নেহের পরশে, বিজ্ঞানবাবুর রসায়নে আসক্ত হয়ে জটলা বাঁধা স্থবীর অণুগুলো সম্বিত ফিরে পেল। চঞ্চল হয়ে একপ্রকার অস্থির কণায় রূপান্তরিত হতে থাকলো। গ্যাসীয় কণাগুলো,আমিষ দ্রব্যে দ্রবীভূত হয়ে খনিজ দ্রব্যগুলোর সাথে মিশে চারশ কোটি বছর ধরে দন্দ্ব-ঐক্যের  ধীরগতিতে পাথরের আদুল গায়ে জমে পাড়া বানিয়ে তোলে। এদিকে সূর্য সহ মহাকাশের কুলীন গ্রহগুলো, পৃথিবীর বুকে আরও অনেককাল ধরে উল্কানিক্ষেপ, ধুমকেতুর ধাক্কা এবং সূর্যরশ্মির জ্বালাময়ী ভাষণের আক্রমণ অব্যাহত রাখলো। সচল জীবাণুগুলো অভিযোজনবাবুর অনুপ্রেরণায়, বিজ্ঞানবাবুর রসায়নের রসে সিক্ত হয়ে পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে সূর্যের ভয়ঙ্কর আক্রমনাত্মক আলোক কণাগুলো’কে শোষণ করে বর্জ্য পদার্থে পরিণত করতে সক্ষম হলো। বর্জ্য পদার্থের সঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে পৃথিবীর আনাচে কানাচে জমা হতে থাকলো অক্সিজেনের মতো উদার পরোপকারী প্রাণবায়ু’র বিপুল সম্ভার।

                    অক্সিজেনের প্রাচুর্য নিয়ে বিবর্তনবাবুর ‘রূপান্তর’ তৎক্ষণাৎ এই  সচল দানা’গুলোকে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর এককোষী প্রানে উত্তোরণ ঘটিয়ে ফেললেন। শুরু হয়ে গেল, বহুকোষী প্রাণ সৃষ্টির খসড়া রেখাচিত্র। রেখাচিত্রগুলোকে প্রাণবন্ত করে তুলতে ছিটাতে থাকলেন বসন্তবাহারের রঙ্গিন স্বপ্নের সুর। এই প্রভাতের আবহসংগীতে জেগে উঠল আগামীর আলোক রেণু। 


               মহাসাগরে, কোষ সৃষ্টির গবেষণাগারে কয়েক কোটি এককোষী জীবাণু নিয়ে পথচলা শুরু। গন্তব্য বহুকোষী’র গুঞ্জন মুখর রাজপথ। প্রতিনিয়ত অণু-পরমাণু আর নতুন নতুন কোষ তৈরীর সরঞ্জাম নিয়ে আজও বিবর্তনবাবু অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন সৃষ্টির চিন্তায় মগ্ন। ধীরে ধীরে এককোষী’র কোষাগারে বাঁধলেন বহু কোষের আকারমাত্রিক সাজসজ্জা। কোষের সাথে কোষের জমাট আলিঙ্গনে সুদৃঢ় অভিযোজন সাঁটিয়ে রঙবেরঙের হরফ লিখে চলেছেন অভিব্যক্তি নামের হিতৈষী সুধীজন। ঝুলিতে তখন  পূর্ণ-অপূর্ণ অবয়বের অনেকগুলি বহুকোষী প্রাণের নিসর্গচিত্র। বিচিত্র কোষগুলো উন্মুক্ত ‘কোষাগারের’ দেওয়ালে  জীবন্ত পাড়া বানিয়ে সংসার পেতে বসলো। তাদের উদ্যেমে সন্তুষ্ট হয়ে বিবর্তনবাবু, তাদেরকে মেরুদণ্ড প্রদান করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্যে মাটিতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পাট্টা দিলেন। তাদের পরিচয়পত্রে লিখা হলো তফসিলভুক্ত বীজাণু সম্প্রদায়।


               সৃষ্টিকর্তা বিবর্তনবাবু মুক্ত মনের উত্তম’পুরুষ। মুস্কিল আসানে ওস্তাদ। ভালো চাষীও। পরিস্থিতির মস্তিষ্কে কারণ বুনে কার্য উৎপাদনে তিনি শুধু পথিক নন, পথিকৃৎ। যুগান্তরের পথে পথে নিঃস্বার্থে সৃষ্টি বিলিয়েছেন ধ্বংস কুড়িয়ে। আজও, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেজে বুনে চলেছেন সৃষ্টি ধ্বংসের ‘পথের পাঁচালী’।

              

              সৃষ্টির মিলনমেলায় একদিন তিনি তাঁর উন্মুক্ত গবেষণাগারে দেখতে পেলেন অস্পষ্ট ক্ষীণাঙ্গী এক স্নেহময়ী অবয়বকে। গায়ে তার মেয়েলি গন্ধ। নগ্ন অসম্পূর্ণ দেহ। গর্ভে সৃষ্টির পরাগ ধারনের অদম্য আগ্রহে আগ্রহান্বিতা। 

                   অকৃতদার বিবর্তনবাবু, সাহায্যকারিনীকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে, পরম সহানুভূতির সঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন........ তুমি কে গো?

ক্ষীণ স্বরে উত্তর -  আমি প্রকৃতি।

বিবর্তনবাবু মিলনের মোহে জানতে চেয়ে ছিলেন - এমন আলুথালু বিবস্ত্র দেহ, তুমি সাজো না কেন গো?

প্রকৃতিদেবী অভাবের ভাবে উত্তর দেন - আমি, অনাথিনী, কে সাজাবে আমায়?

প্রেমাসক্ত আরক্তে বিবর্তন বলেছিলেন, আমি সাজালে, সাজবে তুমি?

দুজনের সাজগোজের কথার সাজ বাসর সাজালো।

প্রকৃতি, বিবর্তনের প্রেমে আবদ্ধ হলো। বাউলের একতারা, দোতারা হলো। যাযাবরের পায়ে উঠল বন্ধনের ঘুঙুর। বাসরঘরের একমাত্র পুরোহিত বিজ্ঞানবাবু আজও বিবর্তনের সংসারের হিত সাধনে সমান ব্যস্ত। গড়ে উঠল বিশ্বসংসার নামের বসতবাড়ি। ‘মালাচন্দনে’ ফুটে উঠল, আনন্দ আশ্রমের আশ্রয় স্থল।

            “বিবর্তন” ও “রূপান্তর” এর রূপ দিয়ে প্রকৃতিদেবীকে সুন্দর করে সাজাতে মত্ত হয়ে রইল আজীবন। নৈসর্গিক ভোগের ঐকান্তিক ত্যাগ বানাতে থাকলো সৃষ্টি সুখের উল্লাস।


              বিশ্ব-সংসারের  যাত্রাপথেই বিবর্তনবাবুরা, অহঙ্কারী পাষাণের  চূর্ণবিচূর্ণ ধ্বংসাবশেষে মাখালেন  রাগ-অনুরাগের আড়ি-ভাব। খুনসুটির কালান্তর চাপে ভুমিষ্ঠ হলো মাটি। মাটির আবহ মায়ায় বাঁধা পড়লো বিশ্বচরাচর। রজস্বলা মাটির ঋতুস্রাবে বাৎসল্য সুধার ডালি নিয়ে জেগে উঠে মধ্যবিত্ত পরিবারের সবুজ কণা। যারা সরাসরি সূর্যের আলো নিংড়ে শর্করা এবং প্রাণবায়ু তৈরিতে দক্ষ কারিগর। শর্করা আর প্রাণবায়ু বক্ষে ধারণ করে পৃথিবী হয়ে উঠল বিশ্বমাতা। 

              অধ্যায়ে অধ্যায়ে, “রূপান্তরের” আকার রহস্য জমিয়ে রেখেছে বেনামী জীবাশ্মের পাণ্ডুলিপি। পরাধীন এককোষী’র হামাগুড়ি থেকে প্রতিটি  হাঁটাচলার দলিল সযত্নে গচ্ছিত রেখেছে যুগান্তরের শিলালিপির কোঁচড়। পাণ্ডুলিপির স্বাক্ষর কিম্বা শিলালিপির অক্ষর এখনও সংশয়ের কুয়াশায় আবৃত হয়ে অপেক্ষমান।

                খেয়ালী বিবর্তন কবে চারপায়ে হাঁটা অর্ধোন্নত বনমানুষ গড়েছিলেন মনেও নেই, তাকেই  সর্বাঙ্গীন উত্তোরণ ঘটিয়ে দু’পায়ে হাঁটা স্বাধীন চিন্তাবিশিষ্ট দোসর প্রানী বানানোর তাগিদ অনুভব করলেন। প্রতিমুহূর্তের ভাঙ্গাগড়ার সৃষ্টিমূলক খেলায় যুক্ত হতে থাকলো নতুন নতুন খেলোয়াড়। অনেক ভেবেচিন্তে বারবার যোগ-বিয়োগ  ঘটিয়ে, খাইয়ে-পরিয়ে স্বাধীন বিচার বিশ্লেষণের সক্ষমতা দিয়ে গড়ে তোলে  সর্বউন্নত জীব মানুষকে। কিছু মানুষের পরিকাঠামোর অপূর্ণতার কারণে সুস্থ চিন্তাভাবনা গঠনের কার্যটি অসম্পূর্ণই থেকে গেল।তারা বনমানুষের প্রবৃত্তি নিয়ে বড় হতে থাকলো স্বার্থপর খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য। বিবর্তনবাবু, সেদিন স্বপ্নেও ভাবেনি এই নতুন খেলোয়াড়ই একদিন ‘রূপান্তর’এর সৃষ্টির গতিপথকে নরকের ধ্বংসাত্মক মাটিতে  নামিয়ে দেবে। 

               অতীতের নিম্নবিত্তের নগ্ন এককোষী থেকে উচ্চবিত্তের ধুতি -পাঞ্জাবি কিম্বা কোট-প্যান্টের, বহুকোষী’তে উত্তোরণের  ইতিহাস ঐতিহাসিক বর্তমান’বাবু এখনও সম্যক লিখে উঠতে পারেননি।

ঐশ্বরিক মতবাদের ধর্ম-ব্যবসায়ীদের হিংস্র আক্রমণ অব্যাহত; কারণ বিবর্তনবাদের ঝড়ে তাদের কাল্পনিক ঈশ্বর ধ্বসে যাবে। সেই ভয়ে তারা গ্যালিলিও- ব্রুনোদের নৃশংসভাবে অত্যাচার ও খুন করতেও দ্বিধা করেনি।     

                  বিশ্ব সংসার বাড়তে থাকলো। বিবর্তনের শয্যায় প্রকৃতির গর্ভে এলো তিন সন্তান। সুজন, দুর্জন আর কন্যা পরিবেশ। প্রকৃতিদেবীর স্তন পান করে বড়ো হতে থাকলো তিন ভবিষ্যৎ।

                 ধীশক্তির কর্মঠ বুদ্ধিমান সুজনদের দল বিবর্তন আর প্রকৃতির সংসারে অবৈতনিক স্বেচ্ছাশ্রমের শুভ চিন্তক সহকর্মী। বিবর্তনবাদী আদর্শে বিশ্বাসী। যথার্থ দোসর হিসেবে বিশ্ব-সংসারকে পরম যত্নে  লালন-পালন করে চলেছেন আজও। সৃষ্টি, তাঁদেরকে সৃষ্টি করে আজ ধন্য। তাদের আচমনে আবাহনে বিবর্তন, প্রকৃতি আর তাঁদের সৃষ্টিতত্ত্ব অমরত্ব লাভ করে আছে।


                     সুজনদের অসতর্কতায়, বিষবৃক্ষের চারা রূপে  দুর্জন’রা ডালপালা মেলে। তাদের ফুল ফলে  কুলাঙ্গার, প্রতারক, জালিয়াতির গন্ধ ছড়ায়। সুখের সংসারে অসুখের তাণ্ডব শুরু হয়। তারা শ্রমবিমুখ এবং মুর্খ হওয়ার কারণে এককোষী প্রাণী থেকে বহুকোষী প্রাণের উত্তোরণের ইতিহাস ভ্রান্ত বলেই মনে করে। শয়তানি করেঅলৌকিক ঠগ নায়ক-নায়িকাদের ভাববাদের ভাবনায় আক্রান্ত হয়ে সততার মুখোশ বেঁধে তারা সদাচারী হিতৈষী সেজে বসে। তাদের দাবি, বিশ্ব-সংসারসহ সমস্ত প্রাণীকুল জগৎগুরু প্রভু শ্রীশ্রীআমাশয়ানন্দজী মহারাজের লীলায় সৃষ্টি। তিনিই সমস্ত প্রাণীর কর্মের নিয়ন্ত্রক। প্রভুর নির্দেশেই তারা এই বিশ্ব-সংসারের দেখভালের দ্বায়িত্ব পেয়েছে। ছলেবলে কৌশলে তারা ‘রূপান্তর’ এবং ‘প্রকৃতি’র সমস্ত সম্পদ জবরদখল করে নেয়। বিজ্ঞানবাবু আজ তাদের হাতে প্রায় বন্দী। বিবর্তনবাবুর পিছু হটার উপক্রম।

প্রকৃতিদেবীর সৌন্দর্য ধ্বংসোন্মুখ। ‘পরিবেশ’এর সংসারে শান্তি বিঘ্নিত, দূষিত। ‘অভিযোজন’ বীরের নয় তদবিরের। ‘অভিব্যক্তি’ আজ ব্যাক্তি-কেন্দ্রিক। ‘সংগ্রাম’ আপোষের বশবর্তী। প্রতিবাদ বাদ পড়ে গেছে কবেই। নীতির-রাজা চরিত্র বদল করে রাজার নীতিতে পরিনত হতে বাধ্য হয়েছে। কিছু কিছু ধর্মান্ধ অনুন্নত প্রবৃত্তির মানুষ, দুর্জন মানুষগুলোর সঙ্গ নিল। ধর্মের কসাইখানায় গরু-ছাগলের মতো মানুষগুলো বিক্রি হতে থাকলো বলি হবে বলে।


                   মাত্র দশ শতাংশ দুর্জন শয়তান, নব্বই শতাংশ সুজন মানুষদেরকে বশীভূত করে  তাদের পরিশ্রমের ফসল কুক্ষিগত করতে বিশেষ ছলনার আশ্রয় নেয়। বিশ্ব সংসারকে টিকিয়ে রাখার অজুহাতে। তাদের সুবিধামতো বেশকিছু নিয়মনীতি প্রবর্তন করে। সেইসব নিয়মনীতির ক্ষমতাবলে শাসন শোষণ অত্যাচার চালাতে থাকে। দুর্জনপন্হী’রা, ছলনায় মা-প্রকৃতি’ এবং বোন-‘পরিবেশ’ এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অলংকার এমনকি ইজ্জৎও বিক্রি করে দিচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানদের শয্যায়। সততাকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে বিশ্ব-সংসারের ভয়ঙ্কর সঙ্কট এনে দিয়েছে। দুর্জনদের চর্চা চেতনার বিবর্তনের সৃষ্টিতত্ত্ব সত্য নয়, রূপকথা। জীবন্ত নয় মৃত।


                   প্রকৃতি,পরিবেশ, সংস্কৃতি আজ মৃত্যুশয্যায়। তাঁদের চিকিৎসা না করে লোকদেখানো আরতি বন্দনা করে, দায় এড়িয়ে যাচ্ছে দুর্জনপন্থী শয়তানরা। ভাববাদী নায়ক নায়িকারা অপকর্মের আপ্ত-সহায়ক। মনু’র সত্বে খুন হতে থাকলো মনুষ্যত্ব। মধ্যযুগের বর্বরতা কুয়াশা আচ্ছন্ন করে রেখেছে আজও। বিশ্ব-সংসার এখন যুক্তিহীন অলৌকিক কুসংস্কারের বৈঠকখানা।

বিবর্তনের সংসারে আজ সঙ্কটের আবর্তন।


আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86930